ক্যাপ্টেন মনজুরুল হক চৌধুরী >>
গত ৫৫ বছরে আমাদের জাতীয় রাজনীতির একটি স্থায়ী ব্যাধি তৈরি হয়েছে। সেটি হচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার। জনগণের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে যাওয়ার কথা যাদের, তারা বরং নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত থেকেছেন। রাষ্ট্রের স্বার্থ, স্থানীয় মানুষের সমস্যা, উন্নয়নের অগ্রাধিকার সবই যেন আড়ালে পড়ে গেছে।
অনেক এমপি সিলেবাসের বাইরে গিয়ে এমন সব কাজে জড়িয়েছেন, যা মূল দায়িত্বের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসঙ্গত। বিভিন্ন প্রভাব-প্রতিপত্তি, দখল, কমিশন, টেন্ডারবাজি কিংবা সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি কখনও। ফলে জনগণের প্রকৃত চাহিদা অনুধাবন করার সুযোগ তৈরি হয়নি।
এমপিদের দায়িত্ব—কথায় নয়, কাজে দেখতে চাই
সংসদ সদস্যদের মূল কাজ দেশের আইন প্রণয়ন করা, নীতিনির্ধারণ করা এবং জনকল্যাণে কাজ করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এসব দায়িত্ব উপেক্ষা করে অনেকেই প্রশাসনিক ও নির্বাহী কার্যক্রমে অযথা হস্তক্ষেপ করেন।
আমরা চাই, ভবিষ্যতে কোন এমপি যেন তার এক্তিয়ার অতিক্রম করে অনৈতিক বা বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত না হয়। স্থানীয় সরকার কাঠামো—ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ—এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠার সময় এখনই
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতন্ত্র কাগজে-কলমে আটকে থাকবে। তাই শুধু আইনগতভাবে নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবেও একটি কার্যকর ব্যারিয়ার তৈরি করতে হবে, যাতে জনগণের প্রতিনিধি তার সীমা অতিক্রম করতে না পারে। প্রয়োজন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
এবার সময় এসেছে স্পষ্ট ভাষায় বলার। আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান। এমপিদের কাজ সীমাবদ্ধ করুন। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করুন। যে রাষ্ট্রে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের কথা ভুলে যায়, সেই রাষ্ট্র কখনোই উন্নত হতে পারে না। আমরা চাই একটি সৎ, নৈতিক, যোগ্য নেতৃত্ব; যেখানে দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের সীমা স্পষ্ট, আইনের প্রয়োগ কঠোর, এবং জনগণের স্বার্থই হবে প্রধান নির্দেশনা।
লেখক: ক্যাপ্টেন মনজুরুল হক চৌধুরী
সমাজসেবক ও মানবাধিকার কর্মী।